বর্তমান সময় সাইকোলজিস্টের কাছে যাতায়াত করা মানুষদের অধিকাংশই মিনেলিয়ালস বা জেন ওয়াই এবং জেন জির অন্তর্ভুক্ত। বাস্তবেও সমাজের অনেক মানুষ নানা ধরণের মানসিক সমস্যায় ভুক্তভোগী। আগেও কি এতো বেশি সংখ্যক মানুষ মানসিক সমস্যার মাঝে ছিলো নাকি বর্তমানে এসে এটা বেড়ে গিয়েছে, আগে কীভাবে মানুষ এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতো, বর্তমানে বেড়ে যাওয়ার কারণ কী!
.
পাচ/ছয় দশক আগের কথা চিন্তা করুন। তখন কি মানুষের ক্যান্সার হতো না! তখন কি মানুষের কিডনি, হার্ট ইত্যাদিতে সমস্যা হতো না! পরিমাণ বা রেশিও এখনের চাইতে কম হলেও সমস্যাগুলো হতো এবং সমাজের প্রায় সবার কাছেই এই সমস্যাগুলো আনডিটেক্টেড ছিলো। সাইকোলজিকাল সমস্যাগুলোও আমার কাছে এমন মনে হয়। আগেও এসব ছিলো, পরিমাণে কম হতে পারে তবে আগে চিকিৎসার পদ্ধতি বা কাউন্সিলিং এর সুযোগ ছিলোনা বিধায় এ সমস্যাগুলোর ভিজিবিলিটি কম ছিলো।
.
জেন ওয়াই বা জেন জির বাবাদের জীবনটা ছিলো সংগ্রামের। তিন চার মাইল হেঁটে স্কুলে যাওয়া, অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়ে পরিবারের দায়িত্ব বা নিজের দায়িত্ব নেওয়া, অন্যের বাড়িতে লজিং থেকে পড়ানো এগুলো খুব কমন ছিলো তাদের জীবনে। নানা প্রতিকূলতা আর চড়াই উতরাই পাড় করা বাবারা চাননি তাদের সন্তানদের জীবনও এমন সংগ্রামমুখোর হোক। “সন্তান যেনো থাকে দুধে ভাতে”। একারণে এই জেনারেশনের মানুষরা লাইফ ম্যানেজমেন্ট, স্ট্রেচ ম্যানেজমেন্ট, প্রব্লেম সল্ভিং এর সাথে জীবনের উল্লেখযোগ্য একটা সময় পর্যন্ত পরিচিত থাকে না। সাইকোলজিকাল গ্রোথ কম হয়। এই অবস্থায় তার উপর যখন দায়িত্ব চলে আসে তখন সে অস্থির হয়ে পরে। ডিপ্রেশন, এনজাইটি ভর করে। কর্মেক্ষেত্রে খুব ভালো দক্ষ, পেশাদাররাও এই বিষয়গুলোতে হারিয়ে যান। কারণ প্রফেশনাল লাইফ ম্যানেজমেন্টের জন্যে তার প্রস্তুতি এবং অভিজ্ঞতা অনেক। সেখানে যে প্রতিটা ধাপ অতিক্রম করেছে পরিশ্রম, মেধা আর প্রব্লেম সল্ভিং এর মধ্য দিয়ে। অন্যদিকে তার পার্সোনাল লাইফে সে অনেক কিছুই পেয়েছে রেডিমেড। অনেক কিছু পেয়েছে না চাইতেই। ফলে একজন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার একটা সিস্টেম কেন রান করছে না তা দেখে নিমিশেই প্রব্লেম আইডেন্টিফাই করে সল্ভ করতে পারলেও নিজের লাইফে এর থেকে আরও সহজ বিষয় নিয়েও পেরেশান হয়ে পরেন।
.
আধুনিক সময়ে সম্পর্কগুলোও প্রফেশনাল হয়ে যাচ্ছে। সবাই একটা দুরত্ব রেখে ভালো সম্পর্ক রাখে। খুব কাছের বন্ধু/বড়ভাইও জানে না তার বন্ধু বা ছোটভাই কেমন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সম্ভত আমাদের বাবাদের সময়ে এমনটা ছিলো না। তারা অনেক কিছু নিজেরা নিজেরা আলোচনা করেই সমাধান করে ফেলতে পারতেন। পরিবারের কেউ একজন তাদের আনঅফিসিয়াল কোচ ছিলেন। মামা-চাচা-খালু অথবা ভাইদের কেউ। তাদের সাইকোলজির উপরে পড়াশোনা কিংবা ডিগ্রি ছিলো না, তবে তারা তাদের অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে সমস্যাগুলোর উপযোগী পরামর্শ দিতে পারতেন। যে কোনো ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা এদের সাথে আলোচনা করে নিতেন। ফলে তাদের জন্যে কাউন্সিলিং সেশনের প্রয়োজন হতো না।
.
একদিকে আধুনিক জিবনে জটিলতা বাড়ছে। অন্যদিকে পরিবার বা বন্ধু মহলে মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, যারা কথা শুনবেন। সময় দিবেন।
.
বর্তমান সময়ে আমরা অনেক বেশি জাজমেন্টাল। ব্লাক এন্ড হোয়াইটের মাঝে থাকতে চাই। বাইনারি ডিসিশান আমাদের খুব পছন্দের। ফলে দুইজন মানুষ অনেক ঘনিষ্ঠ বা আপন হলেও একে অন্যকে নিজের সমস্যার কথা বলেন না। দুইটা ভয় থাকে। যদি অন্যজন তার ব্যাপারে জাজমেন্টাল হয়ে যায় অথবা কখনো তার এই সমস্যা নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমন করে বসে! সাইকোলজিস্টের কাছে এই সমস্যাগুলো নাই।
.
আমি ৮/১০ জন স্যাম্পলকে সামনে রেখে বলছি। তাই এটা প্রোপার রিপ্রেজেন্টেশন নাও হতে পারে। তবে তাদেরকে যখন জিজ্ঞাসা করেছি কী রকম সমস্যার জন্যে তারা কাউন্সিলিং করিয়েছিলো এবং কী সলিউশন পেয়েছে, তখন মনে হয়েছে এই সমস্যার সলিউশন সে তার আশপাশের কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই সে হয়তো পেয়ে যেতো। কিন্তু জিজ্ঞাসা না করার কারণ উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো। অথবা “টাকা দিয়ে কথা শুনলে সেসব মূল্যবান মনে হয়” এই ধরণের ব্যাপার।
.
সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা, খুব কাছের কারও সাথে সমস্যা নিয়ে আলোচনা ছাড়াও মডার্ন এরায় শাররীকভাবে যেমন মানুষকে অসুস্থ করতে ফুড এডাল্ট্রেশন ভূমিকা রাখে তেমনি মানসিকভাবে মানুষকে অসুস্থ করার জনে ভূমিকা রাখে কালচারাল এডাল্ট্রেশন। চারদিকে একাকীত্ব প্রচারের ছড়াছড়ি। ফাস্ট্রেশন, ডিপ্রেশনকে ছড়িয়ে দেওয়ার উপাদানের অভাব নেই।
.
তবে সর্বোপরি সাইকোলজিস্টদের কাছে যাতায়াত করা অনেকেরই ক্রিটিকাল সমস্যা থাকে। যার জন্যে দক্ষ সাইকোলজিস্টের কাউন্সিলিং হাইলি রিকোয়ার্ড। তবে আমার কাছে এই অংশটাকেই অধিকাংশ মনে হয়নি।